রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিদেশি পর্যটক আসার ক্ষেত্রে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা

বুধবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
39 ভিউ
বিদেশি পর্যটক আসার ক্ষেত্রে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা

কক্সবংলা ডটকম(৬ ফেব্রুয়ারি) :: দেশে মূল্যস্ফীতি এখন দুই অঙ্কের কাছাকাছি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে- ডলার সংকট, যা আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ জরুরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা, যাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হতে পারে।

একই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে এ খাত। বরাবরই বলা হয়, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশি পর্যটক আনাও খুব সহজ বলে মনে করা হয়; কিন্তু উদ্যোগের অভাব এবং নানা সংকটে বিকশিত হতে পারছে না সম্ভাবনার খাতটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বিদেশি পর্যটক আসার ক্ষেত্রে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অথচ পাশর্^বর্তী মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকার মতো দেশের অর্থনীতি অনেকটাই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে দেওলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলংকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে অনেকটাই পর্যটনের ওপর ভর দিয়ে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পাহাড়, সমুদ্রসহ পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো সবই আছে বাংলাদেশে। তবে দেশের পর্যটন নিয়ে প্রচারণার অভাব রয়েছে। এছাড়া বিদেশিরা আসতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হন। শুরুতেই তারা হোঁচট খান ভিসার অনুমতি পেতে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অন অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়াও কঠিন। ভিসা পেতে অনেকক্ষেত্রে ধরতে হয় দালাল। বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হলেও এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একজনও ফেরত গেলে ব্যাপকহারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে যেতে হলে ধাপে ধাপে ‘অনুমতির খপ্পরে’ পড়তে হয়। অধিকাংশ পর্যটন স্পটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না। যাতায়াত খরচ, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও চড়া।

ঢাকা থেকে একজন পর্যটকের কক্সবাজার ঘুরে আসার খরচ ক্ষেত্রবিশেষে কলকাতার চেয়ে বেশি। দেশের বেশিরভাগ পর্যটন স্পটে অতিরিক্ত খরচ নেওয়ার অভিযোগ আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতাও কাটেনি। দূরপাল্লার পথে নেই বিশ্রাম ও বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এসব দেখার জন্য একক কোনো কর্তৃপক্ষও নেই। প্রত্যেকটি ভিন্ন সংস্থার দায়িত্বে। দেশে পর্যটনবান্ধব নীতি গড়ে ওঠেনি এখনো।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, বিদেশিদের আগ্রহ বাড়াতে প্রচারণার দরকার আছে। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। দেশে এসে কোনো পর্যটক বড় ধরনের নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়েছেন এমন খবর পাইনি। ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে। সেবার মান আরও উন্নত করা দরকার। অনঅ্যারাইভাল ভিসার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। পর্যটনের সঙ্গে জড়িতদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। পলিসি নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু বেসরকারি সেক্টরকেই মূল কাজটি করতে হবে।

অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশীর মতে, পর্যটন একটি বহুমাতৃক সেক্টর। অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি সম্ভাবনাময়। বিশে^র বহু দেশ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে এ খাতে। অনেক দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের ১০ শতাংশ ভূমিকা থাকে। আর বাংলাদেশের জিডিপিতে এর ভূমিকা মাত্র ৩ শতাংশ। পর্যটনে কর্মসংস্থানের ভূমিকা বিরাট। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও পর্যটনের মাধ্যমে উপকৃত হয়।

কক্সবাজার, সাজেক, রেমাক্রি, টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সর্বত্রই এমনটা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, এক কোটি পর্যটক দেশের ভেতর ও ৫০ লাখ মানুষ দেশের বাইরে ভ্রমণ করে। আমরা যেমন দেশের বাইরে যাই, আমাদের প্রত্যাশা দেশের বাইরে থেকেও মানুষ এখানে ভ্রমণ করতে পারবে।

বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) আবু তাহির মোহাম্মদ জাবের বলেন, পর্যটনকে অগ্রাধিকারের জায়গায় নিতে হবে। পর্যটনের সঙ্গে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক রয়েছে। স্পটে যাওয়ার জন্য রাস্তা, যানবাহন, বিশ্রাম, বিনোদন, টয়লেট, খাবারের মান ও মূল্য, থাকার জায়গা- সব কিছু এর সঙ্গে যুক্ত।

তিনি বলেন, পর্যটনের উন্নয়নে সব কিছুকে অ্যাড্রেস করতে হবে। যেমন- সমুদ্র ভ্রমণে জেটি দরকার। বোট বা জাহাজে ওঠার কিউ নেই। জাহাজে উঠতে গেলে নৌকা দিয়ে উঠতে হয়। অথবা কাঠের তক্তা দিয়ে উঠতে হয়। এর দুই পাশে সাপোর্টিং নেই। অথচ বিপুল বিনিয়োগে তৈরি জাহাজে ওঠার সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ ব্যবস্থা থাকা উচিত। এরকম প্রত্যেকটি ইস্যু পর্যটনবান্ধব হওয়া জরুরি।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি কর্মকর্তারা নানা কাজে বিদেশে যান। সেখান থেকে রপ্ত অভিজ্ঞতা দেশের পর্যটনে কাজে লাগানো যেতে পারে। মাত্র ১১ জন লোক দিয়ে চলে ট্যুরিজম বোর্ড। সাধারণত কম খরচে উন্নত সেবা চান পর্যটকরা। খাবার ও থাকার মান রক্ষা করা যাচ্ছে না। এগুলো দেখার মতো লোক নেই। গত বছর ৫ লাখ ২৯ হাজার পর্যটক এসেছেন দেশে। এর বিপরীতে ৫০ লাখ লোক বিদেশে যান। বিদেশি পর্যটকরা নানা কারণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।

জানা গেছে, পাশের দেশ নেপাল, ভারত ও ভুটানে যেতে আগ্রহী পর্যটকরা যেন বাংলাদেশে আসেন, সেজন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এটি এক দেশের বিষয় নয়। যদি ভারতে ভিসার জন্য আবেদন করে, তাহলে অন্য পাশের দেশে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, দেশের পর্যটন খাতের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার যথাযথ নীতিগত সহায়তা দিতে পারেনি। বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বাংলাদেশ এ খাতে সফলতা পাচ্ছে না। পর্যটকবাহী জাহাজ দেশে আসার অভিজ্ঞতা মন্দ। দফায় দফায় অনুমতি আর যাচাইয়ের ফাঁদে পড়তে হয়েছে। বিদেশিরা শুধু সমুদ্রসৈকত ও সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজারে যাবেন না। সেখানে বিনোদনের তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।

অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাড়ানোর আরও উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন অনেকে। এক হিসেবে বলা হয়, ১৬ কোটির বেশি মানুষের গড়ে প্রতি বছর ১০ ভাগও যদি দেশ ঘুরে দেখেন, তাহলে বিশাল অঙ্কের অর্থনৈতিক তৎপরতার সৃষ্টি হবে।

পর্যটক নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, পর্যটন আকর্ষণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ভয়াবহ। তিনি জানান, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশে একটি ক্রুজশিপ ভ্রমণের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট ১৭টি অনুমোদনের প্রয়োজন হয়েছিল। এমন কি সরকারের একটি সংস্থা ওই ক্রুজশিপে তার কয়েকজন সদস্যকে অবস্থান করতে দিতে হবে বলে আবেদনকারীদের শর্ত দিয়েছিলেন। ওই ক্রুজশিপে ভ্রমণকারী নারীদের আশেপাশে সংস্থার সদস্যদের ঘোরাঘুরি নিয়ে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। আছে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়েও দুর্বলতা।

পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক বাংলাদেশির কাছেও পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে মালদ্বীপ। দেশটির সরকারি তথ্য বলছে, ২০২১ সালে যেখানে মাত্র ৩ হাজার ৯২৩ বাংলাদেশি ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটিতে ভ্রমণে গিয়েছিলেন, সেখানে ২০২২ সালে একলাফে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৮০৭-তে। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৩৩৬ বাংলাদেশি। বাংলাদেশ এখন মালদ্বীপের ১৫তম পর্যটক উৎস। এর বিপরীতে বাংলাদেশে পর্যটক আসার সংখ্যা খুবই হতাশাজনক।

39 ভিউ

Posted ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com